দুই পায়ে লিখে জিপিএ-৫ বিউটির

 ডেস্ক রিপোর্ট» ইচ্ছাশক্তি দিয়ে প্রতিবন্ধিতাকে যে জয় করা যায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বিউটি আকতার তার উদাহরণ। স্থানীয় আকলাস শিবপুর শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পা দিয়ে লিখে এই সাফল্য পেয়েছে অদম্য মেয়েটি। তার এই সাফল্যে বিদ্যালয়সহ পরিবার ও গ্রামের মানুষ এখন গর্বিত। তার ইচ্ছা এখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে সমাজে অবহেলিতদের পাশে দাঁড়ানো।

শরীরের সব অঙ্গ থাকলেই যে সাফল্য পাওয়া যায় তা নয়। ইচ্ছাশক্তি থাকলে যেকোনো অসাধ্যকেই সাধন করা যায়, শিবপুরের বায়েজিদ প্রামানিক ও রহিমা বেগমের গরিব ঘরের মেধাবী ছাত্রী বিউটি তা প্রমাণ করেছে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ায় গ্রামের মানুষের সুদৃষ্টিও এখন তার দিকে।

কি পারে না সে? তরকারি কাটা, পেঁয়াজ কাটা, রান্না করা, সেলাই করা, বাসন মাজা, গৃহস্থালীর প্রায় সব কাজই করতে পারে অনায়াসে। জন্ম থেকেই দুটি হাত তার একদম ছোট ও অকেজো। তাই পা’কেই বেছে নেয় জীবন চলার মূল হাতিয়ার হিসাবে। প্রতিবন্ধীতার কাছে হার না মেনে ছোটবেলা থেকেই পা দিয়ে অভ্যেস করে সব কাজ ও লেখাপড়া করার। অদম্য ইচ্ছে থাকায় সাফল্যও এসেছে বারবার।

প্রতিবন্ধী হওয়ায় অবহেলা করেনি পরিবারের কেউ। মেয়ের ইচ্ছে অনুযায়ী সাহায্য করেছে তারা। তবে হার মানতে হয়েছে দারিদ্রতার কাছে।

বিউটির মা রহিমা বেগম জানান, ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি শান্তশিষ্ট এবং মেধাবী। পড়ালেখা ও কাজের প্রতি তার অসম্ভব ইচ্ছে। যেকোন কাজ একবার দেখলেই শিখে নিতে পারে। অভাবের কারণে মেয়েকে প্রাইভেট টিচার দিতে পারেনি। তবে শিক্ষকদের আন্তরিকতা ছিল বিউটির প্রতি। সকলের দোয়া ও সহযোগিতা পেলে বিউটি একদিন জয়পুরহাটের নাম কুড়াবে বলে আশা করেন তিনি।

বিউটির বাবা বায়েজিদ প্রামানিক বলেন, মেয়ের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দেন তিনি। অভাব থাকলেও বিউটিকে বুঝতে দেননি। মেয়ের লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাবেন তিনি।

একদিকে অভাব অন্যদিকে শারীরিক সমস্য নিয়ে বেড়ে ওঠা বিউটি কখনো কাউকে বুঝতে দিতে চায় না তার কোন সমস্যা আছে। অভাবী সংসারে কখনো বাবা মাকে কষ্ট দেয়নি সে। কখনো কোন কিছুর জন্য বায়না ধরতো না বাবা-মা’র কাছে তবে মনে সংকল্প একটায় প্রতিবন্ধীতাকে জয় করতে হবে, সামনে এগুতে হবে। আর তাই মন দিয়ে পড়ালেখা করে আর বাড়ির যেকোন কাজ করে দিয়ে পরিবারের বোঝা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে সে। অদম্য বিউটি জানায়, এইচএসসিতে ভাল কলেজে পড়তে চায়। কিন্তু দারিদ্র্যতা বাধা হতে পারে এই আশঙ্কা তার। তবে শতবাধা পেরিয়ে ভবিষ্যতে পড়ালেখা শেষ করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চায়। আর তার মত প্রতিবন্ধী ও গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে চায় সে।

২০১১ সালে পিএসসিতে এ+ পাওয়ার পর মিডিয়ায় তাকে নিয়ে বেশ লেখালেখি হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস তাকে এই সাফল্যে নিজের মেয়ে হিসাবে গ্রহণ করেন এবং কিছু আর্থিক সাহায্য করেন। তার এই সাফল্যে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক তাকে নগদ একলাখ টাকা দেয়।

পিএসসির পর জেএসসিতেও ভাল ফলাফল করে বিউটি। স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতি এবং মনযোগী হওয়ায় শিক্ষকদের সহনুভুতি ছিল তার প্রতি।

শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকাম উদ্দীন আখন্দ জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই বিউটি ক্লাশে বেশ মনযোগী। সে নিজেই বিজ্ঞানের সব ছবি আঁকতে পারত এবং পড়া করে দিতে পারত। যদিও শিক্ষকদের বিশেষ দৃষ্টি ছিল তার দিকে। তাকে প্রাইভেট পড়তে হত না।

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, বিউটির এ ফলাফল ক্ষেতলাল উপজেলা তথা জয়পুরহাটবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে। সেই সাথে অন্য শিক্ষার্থীদের কাছে একটা উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে। তার উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ক্ষেতলাল উপজেলা প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে।

দারিদ্র্যতার কারণে উচ্চশিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে তাই বিত্তবানদের সাহায্য কামনা করলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ গ্রামের মানুষ।

প্রকাশক সম্পাদক : জাহাঙ্গীর কবির লিটন
এলাহী মার্কেট , ২য় তলা, বড় মসজিদ গলি, ট্রাংক রোড,ফেনী।
jagofeni24@gmail.com
© 2016 allrights reserved to JagoFeni24.Com | Desing & Development BY PopularITLtd.Com, Server Manneged BY PopularServer.Com