‘আগামী ৮ বছরে দেশে দরিদ্র লোক থাকবে না’

ডেস্ক রিপোর্ট» আগামী ৮ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আর কোনো দরিদ্র লোক থাকবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর পিকেএসএফ মিলনায়তনে মঙ্গা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ কর্মসূচির সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র লোক না থাকার মানে এই নয়, একেবারে দরিদ্র থাকবে না। কিছু সংখ্যক বৃদ্ধ, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী থেকেই যাবে যারা বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। আমরা এসব লোকদের কীভাবে বন্দোবস্ত করা যায় সে উদ্যোগ নিচ্ছি।
‘মঙ্গা’ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আজকের পর বাংলা শব্দকোষ থেকে ‘মঙ্গা’ শব্দটি বিদায় করে দিলাম। আমরা আনন্দের সঙ্গে এ শব্দটিকে বিদায় দিতে পারি। কারণ বাংলাদেশে এখন আর ‘মঙ্গা’ নেই।
পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ এবং পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল করিম।
অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র কমেছে কিন্তু বৈষম্য রয়ে গেছে। তবে বিশ্বব্যাপী যে হারে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে সে তুলনায় কম। তিনি বলেন, দারিদ্র বিমোচনে সরকারের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। মঙ্গা বিদায় হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পিকেএসএফ কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রাইম কর্মসূচির আওতায় অতিদরিদ্রের সংগঠিত করার মাধ্যমে তাদের মাঝে নমনীয় সঞ্চয়, সহনীয় ও নমনীয় ঋণ এবং আপদকালীন ঋণ প্রদান করা হয় এবং আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে (আইজিএ) অতিদরিদ্র সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্ব-নিয়োজিত ও মজুরীভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। অতিদরিদ্র পরিবারের নাজুকতা দূরীকরণে আর্থিক সেবার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও কারিগরি সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রয়োজনে মঙ্গাকালীন সময়ে কাজের বিনিময় অর্থ কার্যক্রম এবং সুপেয় পানি বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এ কর্মসূচিভুক্ত দরিদ্র সদস্যদের মাঝে এ যাবত প্রায় ২ হাজার ৩৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা নমনীয় ঋণ এবং ৭০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা আপদকালীন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া এ কর্মসূচির আওতায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৫ জন সদস্যকে কৃষিজ ও অকৃষিজ বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ এবং ১ হাজার ৭৬৬ জন সদস্যকে বিভিন্ন ট্রেডে বৃত্তিমূলক কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় ঋণ ও অনুদান সহায়তার মাধ্যমে সদস্য পর্যায়ে প্রায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার কৃষি বিষয়ক আইজিএ ৮ লাখ ৭৯ হাজার প্রাণিসম্পদ বিষয়ক আইজিএ এবং ৬ লাখ ৫৯ হাজার অকৃষিজ বিষয়ক আইজিএ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া, এ কর্মসূচির মাধ্যমে সদস্যদের পরিবার প্রায় ২২ হাজার ৫১৫টি মডেল আইজিএ স্থাপন করা হয়েছে। এ কর্মসূচিভুক্ত প্রাথমিক সেবা কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ৮৯ হাজারটি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে ২০ লাখ ৯ হাজার দরিদ্র রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক সেবা কার্যক্রমের আওতায় ৩ হাজার ১৫৪টি হেলথ ক্যাম্প আয়োজন করা হয়েছে এবং দুই হাজার জন অতিদরিদ্র রোগীর ছানি অপারেশন করা হয়েছে। এছাড়া এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ঔষধ অতিদরিদ্র সদস্যের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
প্রাইম কর্মসূচির আওতায় কাজের বিনিময়ে অর্থ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মঙ্গা অভাবকালীন সময়ে অতিদরিদ্রদের জন্য সাময়িক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট সংস্কার মেরামত, পুকুর খনন, পুন:খননের মাধ্যমে অবকাঠামোগত সেবা প্রদান প্রভৃতি কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ম্যানডেজ কাজের বিনিময়ে অর্থ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত অতিদরিদ্র সদস্যদের জন্য সুপেয় পানি বিতরণ ও পুকুরের পানি নিস্কাশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সমাপনি অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রাইম কর্মসূচির অর্জন হলো কর্মসূচিভুক্ত পরিবারের বার্ষিক আয় ২০০৭ সালে ছিল ৩৭ হাজার টাকা, তা এখন বেড়ে ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৩৮ টাকা দাঁড়িয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা ২০০৭ সালে তিন বেলা খাওয়া মাত্র ৪ শতাংশ ছিল, যা এখন বেড়ে ৯৯ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। মঙ্গাকালীন সময়ে কর্মসংস্থান প্রায় শূণ্যের কোঠা থেকে বর্তমানে মাসে ২১ দিন হয়েছে। ২০০৮ সালে পরিবারের গড় সম্পদ ছিল ৬২ হাজার টাকা, এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার টাকা।

প্রকাশক সম্পাদক : জাহাঙ্গীর কবির লিটন
এলাহী মার্কেট , ২য় তলা, বড় মসজিদ গলি, ট্রাংক রোড,ফেনী।
jagofeni24@gmail.com
© 2016 allrights reserved to JagoFeni24.Com | Desing & Development BY PopularITLtd.Com, Server Manneged BY PopularServer.Com