সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল

ডেস্ক রিপোর্ট» মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

সাঈদীর ফাঁসি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং সাজা থেকে খালাস চেয়ে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের ওপর সোমবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষে দুই আবেদন খারিজ করে এ রায় দেন আপিল বিভাগ।

সকাল সোয়া ৯টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্য বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে ১১টা ৫ মিনিটে রায় দেন আপিল বিভাগ।

বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

এর আগে রোববার দুপুর ১২টা থেকে ১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত দু’পক্ষের বক্তব্য শোনেন আদালত। পরে সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবী করেন আদালত।

সাঈদীর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন এসএম শাহজাহান ও তানভীর আল আমিন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

রিভিউ শুনানির প্রথম দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়াতে চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কেন? আপনি তো রিভিউয়ে ফাঁসি চাইছেন তাই না? আর মাহবুব হোসেন তো রিভিউয়ে খালাস চেয়েছেন। তাই এটাই তো আগে শুনানির বিষয়।’

এরপর খন্দকার মাহবুব হোসেন আপিল বিভাগের রায়ের কপি পড়ে শোনান। সাঈদীর খালাসের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিরোজপুরে ছিলেন না। তিনি পরিবার নিয়ে যশোরে ছিলেন। সেখানে মসজিদের পাশে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তিনি পরিবারসহ থাকতেন। তিনি একজন প্রফেশনাল বক্তা। ওয়াজ-মাহফিল করে তিনি জীবন ধারণ করতেন। এটাই তার পেশা।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওই সময় তো বর্ষাকাল ছিল, মে মাস। বর্ষাকালে তিনি কীভাবে ওয়াজ করতেন? মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাস ওয়াজ হয় কি-না?’

তখন খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘সাঈদী প্রফেশনাল বক্তা। তিনি সারা বছরই ওয়াজ করতেন। এটা করেই তিনি সংসার চালাতেন।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওই সময় সাঈদীর নাম আমরা শুনিনি। ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ওই রকম কোনো ওয়াজ-মাহফিল হয়নি। ৮৩-৮৪ সালের পর গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ-মাহফিল প্রকাশ্যে শুরু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ”আমরা আপিল বিভাগ সব আসামির ফাঁসির (মৃত্যুদণ্ড) রায় বহাল রাখিনি। আর যাবজ্জীবন মানে আজীবন কারাবাস। তবে আইসিটি অ্যাক্টে যেভাবে যাবজ্জীবনের কথা বলা হয়েছে, সেটা পড়ে সিদ্ধান্ত দেব।’

এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি শুরু করেন। শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার জানামতে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের অনেকেই পাকিস্তানে ছিলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থক ছিলেন, তাদের অনেকেই বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।’

শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আদালতে কোনো ‘রিভিউ হলেই যে তা খারিজ হয়ে যাবে এমনটি নয়। আমরা চাই বিচার বিভাগটা যেন প্রহসনের জায়গা না হোক।’

অ্যাটর্নি জেনারেল আসামি সাঈদীকে কসাই উল্লেখ করে বলেন, ‘এখানে বলা হয়েছে সাঈদী এভেটর। সে তো এভেটর (ইন্ধনদাতা) নয়, ওই সময় যেভাবে লোক মারা হয়েছে, তাতে সে হুকুমের আসামি, কসাই।’

এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি কসাই না বলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণসহ সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে আমরা তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছি। আপিল বিভাগ যখন একবার কাউকে সাজা দেয়, রিভিউতে সেটা পরিবর্তন খুবই কম।’

গত ৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ মামলাটি শুনানির জন্য রোববার ধার্য করে আদেশ দিয়েছিলো। সে অনুযায়ি রোববার শুনানি শুরু হয়ে সোমবার বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ এবং সাজা বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক দুটি আপিল করে।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ উভয় পক্ষের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।

প্রকাশক সম্পাদক : জাহাঙ্গীর কবির লিটন
এলাহী মার্কেট , ২য় তলা, বড় মসজিদ গলি, ট্রাংক রোড,ফেনী।
jagofeni24@gmail.com
© 2016 allrights reserved to JagoFeni24.Com | Desing & Development BY PopularITLtd.Com, Server Manneged BY PopularServer.Com