জাগো ফেনী ডেস্ক» জামায়াতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্ব : আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজ সুপ্রতিষ্ঠিত কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।’(সূরা বাকারা-৪৩)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত একা পড়ার চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি। (বুখারী ও মুসলিম)
উবাই ইবনে ফা’আর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেছেন, নামাজের প্রথম সারি হলো ফেরেশতাদের সারির মতো। তোমরা যদি প্রথম সারির মর্যাদা সম্পর্কে জানতে তবে তা পাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে। মনে রেখ, একা নামাজ পড়ার চাইতে দুই ব্যক্তির একত্রে নামাজ পড়া উত্তম। আর দুই ব্যক্তির একত্রে নামাজ পড়ার চাইতে তিন ব্যক্তির একত্রে নামাজ পড়া উত্তম। এভাবে যতবেশি লোকের জামায়াত হবে, তা আল্লাহর কাছে তত বেশি প্রিয় হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে জামায়াতে নামাজ পড়ার জন্য কোন একটি মসজিদের দিকে পা বাড়াবে, তার প্রতিটি কদমে আল্লাহ পাক তার জন্য একটি করে পুণ্য লিখে দেবেন। তার একটি করে মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং একটি করে পাপ মুছে দেবেন। তিনি বলেন, একবার এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ(সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ(সা.) আমার এমন কেউ নেই যে আমাকে হাত ধরে মসজিদে আনবে। অতঃপর লোকটি মসজিদে উপস্থিত হওয়া থেকে অব্যাহতি চায় এবং ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি চায়। তিনি তাকে ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়ে দেন। অনুমতি পেয়ে লোকটি রওনা করে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ(সা.)তাকে পুনরায় ডেকে পাঠান। সে ফিরে আসে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি আজান শুনতে পাও? সে বললো, হ্যাঁ, শুনতে পাই। তিনি বললেন, তাহলে তুমি মসজিদে উপস্থিত হবে। রাসুলল্লাহ(সা.)বললেন, ফজর ও এশার নামাজ মুনাফিকদের জন্য অন্যান্য নামাজের তুলনায় অধিকতর ভারি। তোমরা যদি জানতে এই দুইটি নামাজের মধ্যে কি পরিমাণ সওয়াব নিহিত আছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও নামাজে উপস্থিত হতে।
ইসলামের কিছু ইবাদত একত্রিত ও সম্মিলিতভাবে করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়টি ইসলামের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি বলা যায়। যেমন, হজপালনকারীরা হজের সময় সম্মিলিতভাবে হজ পালন করেন, বছরে দু’বার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় (কুরবানি ঈদে)মিলিত হন। প্রতিদিন পাঁচবার জামাতের সাথে নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হন। জামাতের সাথে নামাজ মুসলিমদের মধ্যে সাম্য, আনুগত্য, সততা এবং প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দেয়। কেননা ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, ছোট-বড় একই স্থানে ও কাতারে দাঁড়ায়, যা দ্বারা আন্তরকিতা সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্ব, বিচ্ছিন্নতা বিলুপ্ত হয়।
জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন প্রকাশ পায় এবং কথায় ও কর্মে মহান আল্লাহকে আহ্বান করা হয়, জামাতের সাথে নামাজ কায়েম ঐ সকল বৃহৎ কর্মের অন্তর্ভুক্ত যা দ্বারা বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং এটি মর্যাদা ও নেকি বৃদ্ধির কারণ।
ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ নামাজ। এটি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক আমল যে, রাসূলুল্লাহ(সা.) ও সাহাবাদের যুগে তা আমল করার জন্য যদি কেউ জামাতে শামিল না হতো তবে তাকে মুসলমানই মনে করা হতো না। সে সময় মুনাফিকরা পর্যন্ত নিজেদের মুসলিম হিসেবে জাহির করার জন্য নামাজের জামাতে শামিল হতো।
কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত বাণী থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব কত। তাই আসুন, জামাতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে একটি জামাতবদ্ধ জিন্দেগি গড়ে তুলে আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরি। আল্লাহ তা’আলা আমাদের জামাতবদ্ধ জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুক।
জামাতের সাথে সালাত আদায়ের গুরুত্ব
জাগোফেনী টুয়েন্টিফোরডটকম | আপডেট : November, 18, 2016, 9:33 am
