ডেস্ক রিপোর্ট» যেসব ট্রাকে অবৈধভাবে বাম্পার, অ্যাঙ্গেল ও হুক স্থাপন করা হয়েছে, তা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে খুলে ফেলতে হবে।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) মহাসড়কে মোটরযানের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন স্টেক-হোল্ডারদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এ ছাড়া সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, চার এক্সেল বা চৌদ্দ চাকার কন্টেইনার বহনকারী দীর্ঘযান বা প্রাইম মুভারগুলো আরও একটি এক্সেল যুক্ত করে সর্বোচ্চ ৪২ টন পর্যন্ত ওজন পরিবহন করতে পারবে।
এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি এক্সেল বা চারটি চাকা সংযোজনে প্রাইম মুভার মালিকদের ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘চার এক্সেল বা চৌদ্দ চাকাবিশিষ্ট কন্টেইনার বহনকারী দীর্ঘযান বা প্রাইম মুভারগুলো সর্বোচ্চ ৩২ টন পর্যন্ত ওজন পরিবহনে আইনগত কোনো বাধা নেই। চার এক্সেলের প্রাইম মুভারে একটি অতিরিক্ত এক্সেল স্থাপন করে পাঁচ এক্সেলে রূপান্তরের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৪২ টন পর্যন্ত ওজন পরিবহন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি এক্সেল বা চারটি চাকা সংযোজনে প্রাইম মুভার মালিকদের ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, যেসব ট্রাকে অবৈধভাবে বাম্পার, অ্যাঙ্গেল ও হুক স্থাপন করা হয়েছে তা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে খুলে ফেলারও সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দুই এক্সেল বা ছয় চাকার পরিবহনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ওজনসীমা নির্ধারণে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। শিগগিরই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। পরের সভায় এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
খাদ্য এবং সার পরিবহণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ওজনসীমা এক্সেললোড নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে পুনর্নির্ধারণ করে কয়েক দিনের মধ্যেই আদেশ জারি করা হবে বলেও জানান কাদের।
সড়কের ক্ষতি প্রতিরোধে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত ১৬ অগাস্ট গাড়ি ভেদে পণ্য পরিবহনের ওজন নির্ধারণ করে আদেশ জারি করে। তাতে ১৪ চাকার প্রাইম মুভারকে সর্বোচ্চ ৩৩ টন পর্যন্ত মালামাল বহনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২৬ সেপ্টেম্বর ধর্মঘট ডাকে চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে ধর্মঘট স্থগিত করে সংগঠনটি।
ওবায়দুল কাদের উপস্থিত পরিবহন শ্রমিকসহ সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আজকে একটি বিষয়ে আমাদের এ অঙ্গীকার হোক যে সমস্যার জন্য ধর্মঘট হয় এ বিষয়গুলো সময়মতো বসে আলোচনার টেবিলে সমাধান করব। তবে আলোচনার আগে আমরা কোনো অবস্থাতেই আমাদের দেশকে, আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যকে, আমাদের অর্থনীতিকে জিম্মি কোনো ধর্মঘটে আমরা যাব না। এটাই হোক আমাদের সিদ্ধান্ত।’
‘আলোচনার পথ খোলা আছে। প্রাইম মুভার বলেন, কাভার্ড ভ্যান, বাস মালিক-শ্রমিক সবার সাথে আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। দেশের ক্ষতি আসলে হয়েছে। আর যাতে দেশের ক্ষতি আমরা না করি। এই ক্ষতিটা হলে আমাদানি-রফতানির ওপর ভীষণ বাধা হবে, প্রতিক্রিয়া হবে। এই প্রতিক্রিয়ার কারণে বায়াররা ফিরে যাবেন, জাহাজ ফিরে যাবে, এটা দেশের জন্য ভালো খবর নয়’ বলেন মন্ত্রী।
সভার শুরুতে সড়ক মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের পরিবহনের আকার ও ধরণ, অতিরিক্ত ওজন, এক্সেল লোডবিষয়ক নীতিমালা, অতিরিক্ত ওজন পরিবহনে সড়কের ক্ষয়ক্ষতি, দুর্ঘটনা এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সড়কে চলাচলকারী পরিবহনের ওজনসীমা ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশমালাসহ একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক।
সভায় নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও সভায় বিজিএমইএ’র সভাপতি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, এফবিসিসিআই, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, প্রাইম মুভার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা ছিলেন।