ডেস্ক রিপোর্ট» অর্থনীতির ভাষায় দ্রব্যমূল্য বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। আবার দ্রব্যমূল্য কমলে মূল্যস্ফীতি কমে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি কমলে দ্রব্যমূল্যের দাম সহজলভ্য হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেশের দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতিতে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়লেও কমছে মূল্যস্ফীতি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, সেপ্টেম্বর শেষে পয়েন্ট-টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
অথচ গত দুই মাস ধরেই অনেকটা লাগামহীন হয়ে পড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। রাজধানীর বাজারে কোনো সবজির কেজি ৪০-৫০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। সবচির মতোই চড়া চাল, ডাল, তেল, চিনি মসলার বাজার।
দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতির এমন চিত্রের বিষয়ে সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির নির্ধারণ করা হয় অনেকগুলো পণ্যের দামের ভিত্তিতে। আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হয় সেটি বিবিএসই ভালো বলতে পারবে।’
‘তবে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের দাম এবং মূল্যস্ফীতিতের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা কিছুটা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। দ্যব্যমূল্যের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তারপরও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার পরও কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমছে তা বিবিএসই ভালো বলতে পারবে’ বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
এদিকে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) যাত্রাবাড়ি, পুরান ঢাকা, ধুপখোলা, হাতিরপুল বাজার, সেগুনবাগিচা, ফকিরাপুল বাজার ঘুরে দেখা যায় চাল, আটা, চিনি, বেগুন, টমেটো, ধনেপাতা, ঝিঙা, ধেড়স, বরবটি, ছোলা, ডাবলি, মটর, আলু, রসুন, কাঁচামরিচসহ সব সবজির দাম চড়া।
বাজার ভেদে প্রতিকেজি পুরোনো গোল আলু ২২-২৫ টাকায়, নতুন আলু ৭০-৮০ টাকায়, কাঁচামরিচ ১০০-১২০ টাকা, টমেটো ৮০-১০০ টাকা, ঢেড়স ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙা ৫০-৬০ টাকা, পটোল ৪০-৫০ টাকা, শিম ৮০-১০০ টাকা, কাঁচাকলা হালি ২৫-৩০ টাকা, কচুর মুখী ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ছোট আকারের ২৫-৩০ টাকা পিস, ছোট ফুলকপির পিস ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর লালশাক, সবুজ শাকের আঁটি ১০-২০ টাকা এবং পালন শাক ১৫-২৫ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে। আটার কেজি ২৫-৩০ টাকা, খোলা সোয়াবিন তেল ৯০-৯৫ টাকা। বোতলজাত সোয়াবিন তেল এক লিটির ৯৫-৯৮ টাকা, চিনি ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতরা জানিয়েছে, কোরবানির ঈদের আগে থেকেই বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম এমন চড়া। কয়েক দিন ধরে বাজারে শীতকালীন শাকসবজি বাজারে আসলেও দাম কমেনি।
যাত্রাবাড়ীর বিক্রেতা আমিনুল দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমেকে বলেন, ‘পুরোনো আলুর কেজি ২৫ টাকা, নতুন আলু ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের কেজি ১০০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, বেগুনের ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে ও আড়তে সব ধরনের শাকসবজির দাম চড়া। বাজার থেকে আমাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে, যে কারণে আমরাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। পাইকারি বাজারে দাম কমলে আমরাও কম দামে বিক্রি করব।
হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা মো. আলমগীর জানান, এ বাজারে বেগুন ৭০ টাকা কেজি, টমেটো ১০০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ দেশি ৪৫ টাকা কেজি, চীনের আমদানি করা রসুন ১৮০ টাকা কেজি, দেশি রসুন ১৬০ কেজি, কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বিবিএসর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, শহর এলাকায় সেপ্টেম্বরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ২১ শতাংশ। শহরে খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৩ শতাংশে এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
অপরদিকে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত খাতে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশে দাঁড়য়েছে।