আইসিটি ডেস্ক»এ্যাক্টের ৫৭ ধারা সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। এ আইনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা গ্রেফতারসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন-দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টুর বক্তব্য প্রসঙ্গে পলক এমন আশ্বাস দেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিাআরইউ) গোলটেবিল মিলনায়নে বুধবার দুপুরে প্রতিমন্ত্রী এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন আশ্বাস দেন। ‘তথ্য-প্রযুক্তি, নিউমিডিয়া ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজন করে ডিআরইউ।
অনলাইন মিডিয়ার জন্য দ্রুত একটি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়ে সেমিনারে তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, যে নিউজ প্রকাশের জন্য অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিককে আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারায় গ্রেফতার বা হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ একই নিউজ প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ হলে এ ধারার আওতায় না আসায় কোনো কিছু হচ্ছে না। এ ধরনের দ্বৈতনীতি থাকতে পারে না। এটা অনলাইন মিডিয়া বিকাশে শুধু বাঁধা নয় স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা।
তিনি বলেন, এখন শুধু যে অনলাইন মিডিয়ারই বিপ্লব হচ্ছে তা নয়, প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি এখন টিভি ও রেডিওগুলোতেও অনলাইন সংস্করণ হচ্ছে এবং তা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই অনলাইন মিডিয়ায় যারা কাজ করেন তারা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন সেজন্য দীর্ঘদিন ধরেই সাংবাদিকরা আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারাটি বাতিল বা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছেন। এটা সরকারকে গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখা দরকার ।
আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারা নিয়ে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদকের বক্তব্য প্রসঙ্গে জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, মিন্টু ভাই বলেছেন কিছু কিছু জায়গায় ৫৭ ধারা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আমি মনে করি অবশ্যই আইন থাকা দরকার। তবে এ আইনটির মাধ্যমে যাতে সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার না হন সেজন্য তা সংশোধনের জন্য আমাদের আইনমন্ত্রী মহোদয়কে পরামর্শ দেব। আইসিটি আইনটি ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট-২০১৬’ তে একত্রিভুত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে এটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। এ আইনটি নিয়ে আমাদের এখনো পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশের পর তা বন্ধ করে দেওয়া প্রসঙ্গে জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সন্তান একজন আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। তার সম্পর্কে একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সংবাদ মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাকে নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে-এটা ষড়যন্ত্র হতে পারে, সংবাদ হতে পারে না। আর এসব ষড়যন্ত্র মূলক তথ্য সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেওয়া হয়,এটা উদ্দেশ্য মূলক হিসেবে দেখবেন না আপনারা। যেন এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা না হয় সেজন্য সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে যখন ফেসুবকের সদর দফতর পরিদর্শনে যাই, দেখি তাদের কাছে বাংলাদেশের কোনো ম্যাপ নেই। আমি তাদের কাছে আমাদের দেশে ফেসবুক ইউজারের সংখ্যার তথ্য তুলে ধরি। বাংলাদেশসহ ২০০ টি দেশে ফেসবুক ইউজার রয়েছে। আমাদের দেশে দুই কোটির উপরে ফেসবুক ইউজার রয়েছেন। তবে, আমাদের দেশে ফেসবুকের কোনো অফিস নেই। ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে আমাদের দেশে অফিস করতে চাপ দিচ্ছি।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে তিনটি বিপ্লব হয়েছে। বাংলাদেশে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে কৃষি ও শিল্প বিপ্লবে কয়েকশ’ বছর পিছিয়েছে। আর প্রযুক্তি বিপ্লবের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়েছি কয়েক দশক। তবে বর্তমানে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন এবং তা জনগণের দোরগড়ায় পৌঁছে দিতে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সাংবাদিকদের জন্য তার মন্ত্রণালয় থেকে কি কি করছেন তা তুলে ধরেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, মফস্বলের এক হাজার ৯২০ জন সাংবাদিককে আউটসোর্সিংয়ের উপর ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। ডিআরইউ সদস্যদেরকেও কীভাবে এ ট্রেনিং দেওয়া যায় তার কারিকুলাম ঠিক করতে সাংবাদিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সেমিনারে ডিআরইউ সভাপতি জামাল উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরেন। একইসঙ্গে ডিআরইউ-এর মিডিয়া সেন্টারের উন্নয়ন ও ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং এ্যাওয়ার্ডে আইসিটি বিষয়ে পুরষ্কারটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ডিআরইউ মিডিয়া সেন্টারে ১১ টি কম্পিউটার প্রদান এবং একটি মাল্টিমিডিয়া পাওয়ার প্রজেক্টর দেওয়ার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে ‘ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিং এ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য আইসিটি বিষয়ে ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য ২টি পুরষ্কারের অর্থ তার মন্ত্রণালয় থেকে সংস্থানের ঘোষণা দেন। এ দুটি পুরষ্কারের মূল্যমান ঘোষণা করা হয় ৫০ হাজার টাকা করে।
সেমিনারে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে আধুনিক পেশা। জ্ঞানীদের পেশা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরকে সামনে এগুতে হবে। আধুনি প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া এখন আর সাংবাদিকতা হবে না।
তিনি বলেন, নিউ মিডিয়া এবং নিউজ মিডিয়া এক নয়। নিউ মিডিয়ায় যারা কাজ করছেন তাদের সাংবাদিকতায় বেসিক নলেজ থাকতে হবে। নিউ মিডিয়ায় দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা হতে হবে। প্রযুক্তি বিপদজনক ব্যবহার যাতে না হয় সেজন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রচার নীতিমালা হচ্ছে। ইউজারদের সঙ্গে (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি) বসে যেন এ আইনটি করা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক অজিত কুমার সরকার।
।। দি রিপোর্ট২৪