ডেস্ক রিপোর্ট»শুক্রবার ঢাকায় এবং শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের প্রতিবাদের দাবিতে এ কর্মসূচির ডাক দেয় দলটি।
রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার সারাদেশের জেলা সদর ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া ঢাকায় এই কর্মসূচি শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক যারা বাতিল করেছে তারাই মূলত স্বাধীনতা বিরোধী। এই সিদ্ধান্ত শুধু সংকীর্ণতার পরিচয় নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিকৃষ্টতম একটা উদাহরণ।
বুধবার(০৭ সেপ্টেম্বর) প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। পরে জাতীয় জাদুঘর থেকে এ পদক সরিয়ে নেওয়া হয়।
২০০৩ সালে তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। তৎকালীন বিএনপি সরকারের ওই পদক্ষেপ জিয়াকে ওপরে তোলার চেষ্টা হিসেবে দেখে জাতির জনককে অবমাননার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সম্প্রতি জিয়াউর রহমানকে দেওয়া রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরনোত্তর স্বাধীণতা পদক প্রত্যাহারকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসুত’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরো সংকটময় ও জটিল করে তুলবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পদক প্রত্যাহার দেশের রাজনীতিতে খারাপ নজির সৃষ্টি করা হয়েছে। এর জন্য আমরা তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ একই সঙ্গে পদক যথাস্থানে স্থাপন করার আহ্বান জানান তিনি।
পদক প্রত্যাহারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তে শুধু জিয়াউর রহমানকে হেয় করা হচ্ছে না, স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা অসাধারণ অবদান রেখেছেন তাদের সকলের জন্য এটি চরম অবমাননাকর।’
তিনি বলেন,‘সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রমান করলো যে, সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিলোনা। এই ধরনের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত দেশকে আরো বিভক্ত করবে। এই সিদ্ধান্ত শুধু সংকীর্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত নয়, এটা প্রতিহিংসা পরায়ন, গণবিচ্ছিন্ন ঔ ঔদ্ধত্যপূর্ন। এটি স্বাধীণতা পরবর্তী সময়ে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ব্যক্তিবর্গদের অবমাননা করার শামিল।’
স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক যারা কেড়ে নিচ্ছে, তারা স্বাধীনতাকে অস্বীকার করছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তখন থেকেই জিয়া একটি নাম, একটি কিংবদন্তি, একটি স্বপ্ন।‘
তিনি বলেন, ’বিচারপতি খায়রুল হকের একটি রায়ের অবজারভেশন হতে সমগ্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক চিত্র বদলে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের এই অনৈতিক সরকার। শহীদ জিয়া সামরিক অভ্যূত্থান ঘটাননি। ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যূত্থান ঘটিয়েছিলো আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক।‘
তিনি আরোও বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা জিয়ার অবদানকে অস্বীকার করে শুধুমাত্র আদালতের রায়ের বিকৃত ব্যাখ্যা করে তার পদক সরিয়ে ফেলে, মাজার সরিয়ে ফেলতে চায়; তারাই স্বাধীণতা বিরোধী। আদালতের রায়ের অপব্যাখ্যা দিয়ে ইতিহাস নির্ধারণ করা যায়না। সত্যের ওপর ভিত্তি করেই কালজয়ী ইতিহাস রচিত হয়।’
আওয়ামী লীগ সরকার ইতিহাস বিকৃত করছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনৈতিক সরকার শুধু ইতিহাস বিকৃতই করছেনা, তাদের নিজেদের স্বার্থে দেশের সকল স্থিতিশীলতা ধ্বংস করে স্বেচ্ছাচারিতার চরম নজির স্থাপন করে ভিন্ন রংয়ে একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিচ্ছে জনগণের ওপর। বহুমত, বহুপথ ও মুক্ত চিন্তাকে কবর দিয়ে ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুর কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।
শুক্র ও শনিবার বিএনপির বিক্ষোভ
জাগোফেনী টুয়েন্টিফোরডটকম | আপডেট : September, 8, 2016, 6:14 pm