মিরসরাইয়ে পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোতে ঘটছে দুর্ঘটনা, সতর্ক থাকার আহ্বান

ডেস্ক রিপোর্ট»মিরসরাইয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি ঝর্ণায় ঢল নামছে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত মানুষ ঝর্ণার পানিতে একটু গা ভাসিয়ে নিতে ছুটে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে পর্যটকদের অসাবধানতার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। সম্প্রতি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ৩ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত। দুর্ঘটনার কবলে পড়লে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া মাঝে মধ্যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে পর্যটকরা।

খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে গিয়ে পাহাড় থেকে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক যুবক আহত হয়েছে।

স্থানীয়দের সহযোগিতায় মিরসরাই ও সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে।
আজাদের বন্ধু সায়মুন মাহমুদ জানান, তারা ৬ বন্ধু কুমিল্লা থেকে ঝর্ণা দেখতে আসে। খৈয়াছড়া ঝর্ণার প্রথম ও দ্বিতীয় ঝর্ণা দেখে তৃতীয় ঝর্ণা দেখতে আজাদ পাহাড়ের উপরে উঠে। এসময় পা পিছলে সে পাহাড়ের প্রায় দেড় কিলোমিটার নিচে পড়ে একটি গাছের সাথে আটকে যায়।

১৫ আগস্ট নয়দুয়ারিয়া নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় কূপে ডুবে অনিমেষ দে (২৭) নামে এক পর্যটক নিহত হয়েছে। সে চট্টগ্রামের ফকিটছড়ি উপজেলার নিরঞ্জন দে’র ছেলে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে।

অনিমেষদের বন্ধু তানভীর আলম জানান, তারা তিন বন্ধু চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকা থেকে নয়দুয়ার এলাকায় নাপিত্তাছড়া পাহাড়ি ঝর্ণা দেখতে আসেন। পাহাড়ের ওপর থেকে নামার পথে পা পিছলে অনিমেষ দে কুপে পড়ে যায়।

২৪ আগস্ট দক্ষিণ ওয়াহেদপুর রূপসী ঝর্ণায় উপর থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায় সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক। তার বাড়ি সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া এলাকায়।

গত ১৭ জুলাই মহামায়া লেকে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয় শাহাদাত হোসেন (২২) নামে এক যুবক।

১৮ জুলাই বিষয়টি জানাজানি হলে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ওই যুবককে উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করে। ১৯ জুলাই পানিতে খুঁজে শাহদাতকে উদ্ধার করা হয়। সে মিরসরাই উপজেলার সদর ইউনিয়নের গড়িয়াইশ গ্রামের মৃত আলী আহম্মদের ছেলে।

১৫ জুলাই খৈয়াছরা ঝর্ণার সাতটি স্তরের ৫ম স্তরে উঠার পর স্থানীয় এক পর্যটক পিছলে পড়ে যাওয়ার সময় তাকে ধরতে যায় ওয়াসিম আসগর। ওই পর্যটক সামান্য আঘাত পেলেও ওয়াসিম পাহাড়ের নিচে পড়ে যায়। গহীন জঙ্গল হওয়ায় স্থানীয় লোকজন অনেক চেষ্টা করেও ওয়াসিমকে উদ্ধার করতে পারছিল না। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত পর্যটককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি করে। খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সীতাকুন্ড সার্কেল এএসপি মাহবুবুর রহমান।

জানা গেছে, কিছু বিষয়ে সতর্ক না থাকায় অনেক সময়ই ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা। দর্শনার্থীদের অসতর্কতার জন্য ইতিমধ্যে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন মিরসরাই উপজেলা ও থানা প্রশাসন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া খেয়ালখুশি মতো গহীন জঙ্গলসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলোমেলোভাবে বেড়াতে গিয়ে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছে। এর জন্য অনেকেই দর্শনার্থীদর দায়িত্বহীনতা ও অসংযত আচরণকে দায়ী করছেন।

খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, মুলত দায়িত্বহীনতা ও অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা বিপদনজক স্থানে না যেতে সতর্ক করে সাইনবোর্ড দিয়েছি। তারপরও পর্যটকরা সেসব স্থানে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। অনেকে ঝর্ণার উপরে উঠে সেলফি তুলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়।

এ বিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ এমকে ভূঁইয়া বলেন, কেউ সাদামাটাভাবে বেড়াতে আসলে কোনো সমস্যা স্বাভাবিকভাবে হয় না কিছু ছেলেমেয়ে খোলামেলা পোশাকে আবার কেউ জঙ্গলের মধ্যে অবাধে মিলামিশা করলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ওই সময়কে ছিনতাইকারীরা টার্গেট করে। গ্রামীণও গহীন এই জনপদে নিজ দায়িত্বে নিরাপত্তায় সতর্ক থাকা জরুরী। আবার অতি পিচ্ছিল ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকায় নিজেরাই সতর্ক না থাকলে দুর্ঘটনা স্বাভাবিক। তাই তিনি সবাইকেই সতর্ক থেকে নিজেদের সংযত রেখে নিজ দায়িত্বে সচেতন থাকার অনুরোধ করেন।

প্রকাশক সম্পাদক : জাহাঙ্গীর কবির লিটন
এলাহী মার্কেট , ২য় তলা, বড় মসজিদ গলি, ট্রাংক রোড,ফেনী।
jagofeni24@gmail.com
© 2016 allrights reserved to JagoFeni24.Com | Desing & Development BY PopularITLtd.Com, Server Manneged BY PopularServer.Com