ডেস্ক রিপোর্ট»পটুয়াখালীর পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি সম্বলিত প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত চিঠি শিশু শীর্ষেন্দুর কাছে হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসক। এ সময় শীর্ষেন্দুর পড়ালেখার দায়িত্ব নেয় জেলা প্রশাসন।
সোমবার বিদ্যালয়ের ছাত্র মিলনায়তনে কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক এ কে এম শামীমুল হক সিদ্দিকী শীর্ষেন্দুর হাতে প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি তুলে দেন।
পায়রা নদীতে সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখে পটুয়াখালীর সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু। প্রধানমন্ত্রী সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ফিরতি চিঠি দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এ কে এম শামীমুল হক ছিদ্দিকী, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান মোশারফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেন, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুজ্জামান মনি, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আহমেদ মৃধা, মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান মোহাম্মদ আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রমুখ।
এসময় জেলা পরিষদ প্রশাসক খান মোশারেফ হোসেন ৫০ হাজার এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ মৃধা ১০ হাজার টাকা করে শীর্ষেন্দুকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দেন। চিঠি হস্তান্তরের পর শীর্ষেন্দুর পরিবার ও সহপাঠিরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়।
১৫ আগস্ট পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় পায়রা নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লিখে।
প্রধানমন্ত্রী ঐ চিঠির জবাবে বলেন, শীর্ষেন্দুর চিঠি পেয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। নৌকায় নদী পার হবার ঝুঁকি নিয়ে ছেলেটির উদ্বেগের প্রশংসা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, মির্জাগঞ্জের পায়রা নদী যে অত্যন্ত খরস্রোতা সে বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। শীর্ষেন্দুকে ঐ নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলে পৌঁছায়।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে শীর্ষেন্দু জানায়, আমি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। আমার বাবার নাম বিশ্বজিৎ বিশ্বাস এবং মায়ের নাম শীলা রাণী সন্নামত। আমি পটুয়াখালী গভঃ হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু অবিনাশ সন্নামত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। আমাদের বাড়ি মির্জাগঞ্জ পায়রা নদী পার হয়ে যেতে হয়| ঐ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। কখনো নৌকা ডুবে যায়, কখনো কখনো ট্রলার ডুবে যায়।
তাই আমাদের জন্য মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি ব্রিজ তৈরির ব্যবস্থা করুন।
সে জানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর শৈশবকাল নিয়ে রচনা লিখে সে তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার এলাকার পায়রা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে লেখা শীর্ষেন্দুর চিঠি
জবাবে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরে পাঠানো চিঠিতে তারিখ রয়েছে ৮ সেপ্টেম্বর। এতে লেখা হয়, ‘স্নেহের শীর্ষেন্দু, তুমি শুধু দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও, দেশের ভাবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা।’
‘নিজের পিতামাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’
শেষের দুই লাইনে শীর্ষেন্দুসহ পরিবারের সবার মঙ্গল কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শীর্ষেন্দু তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা পটুয়াখালী শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং তার মা সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে কাজ করেন। শহরের পুরানবাজার এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। শীর্ষেন্দুর বাবা বিশ্বজিৎ বলেন ‘তাকে নিয়ে আমরা খুব গর্বিত। প্রধানমন্রী তার চিঠির জবাব দিয়েছেন, এতে আমরা আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পেয়ে শীর্ষেন্দুর মুখে হাসি
জাগোফেনী টুয়েন্টিফোরডটকম | আপডেট : September, 26, 2016, 12:12 pm