ডেস্ক রিপোর্ট »গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনো ভবনের ভেতরে অনেকে আটকে পড়ে আছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পুলিশ।
এদিকে ময়নাতদন্তের জন্য টঙ্গী হাসপাতাল থেকে ১৯টি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার বেলা সোয়া ৫টার দিকে লাশগুলো নিয়ে আসা হয়। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত ৫ জনের লাশও হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। অপরদিকে কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবন ধসে নিহত এক নারীর লাশ তার স্বামী বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
এ ঘটনায় আহত ও অগ্নিদগ্ধদের ঢাকা, টঙ্গী ও গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় কারখানার ৪ তলা একটি ভবন ধসে পড়েছে। হেলে পড়েছে পাশের একটি ৩ তলা ভবন। বেলা ১টার দিকে পাশের একটি ৬তলা ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জয়দেবপুর, টঙ্গী, কুর্মিটোলা, সদর দফতর, মিরপুর এবং উত্তরাসহ আশে-পাশের ফায়ার স্টেশনের ২৩ টি ইউনিটের কর্মীরা।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টার দিকে টাম্পাকো ফয়েলস নামের ঐ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর ভয়াবহ আগুন কারখানা ভবনের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানা থেকে ১৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।
টঙ্গীতে নিহতরা হলেন-সোলাইমান (৩০), হান্নান (৬২), ইদ্রিস (৪০), আল-মামুন (৪০), শংকর সরকার (২৫), জাহাঙ্গীর (৫০), সুবাস চন্দ্র (৪০), রফিকুল ইসলাম (২৮), রেদোয়ান (৩৫), জয়নুল (৩৬), আনোয়ার আলী (৩৫), আনিসুর রহমান (৪০), রাজেশ (২০) ও রাশেদ (২৭) ও আরও অজ্ঞাত পরিচয় ৩ জনের এর মরদেহ উদ্ধার করে টঙ্গী হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ভবন ধসে নিহত টঙ্গীর আসমা বেগমের (২২) লাশ তার স্বামী সুমন বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন- আনোয়ার হোসনে (৪০), ওয়াহিদুজ্জামান স্বপন(৩৫), দেলোয়ার হোসেন (৪০) ও তাহমিনা আক্তার (২০) ও আশিক (১২)। ঢামেক হাসপাতালে মোট ২৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ১ জনের অবস্থা আশংকাজন। ৩ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার পারভেজ হোসেন জানান, টঙ্গী হাসপাতালে ১৯ জনের লাশ আছে।
শ্রম ও কর্ম সংস্থান প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম,গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন, জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম বলেছেন, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যজিষ্ট্রেট রায়হেনুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। তাছাড়া নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. রফিকুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন, সকাল ৬ টার দিকে টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় বয়লার বিষ্ফোরন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
টঙ্গী ৫০শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. পারভেজ মিয়া আরও জানান, আগুনে দ্বগ্ধ ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অনেকের।
গুরুতর আহত ফয়েল কারখানাটির শ্রমিক রুবেল জানান, তারা ভোরে কাজে যোগদানের পর পরই কারখানার বয়লার বিস্ফোরিত হয়। কারখানাটিতে প্লাষ্টিক পেপারে প্রিন্টিং কাজ করা হয় বলেও জানান তিনি। কারখানার তিন শতাধিক শ্রমিক ৩টি পালায় কাজ করে। সেই হিসেবে বলা যায় সকালে দুর্ঘটনার সময় কমপক্ষে শতাধিক শ্রমিক কর্মরত ছিলো।
টঙ্গীতে বয়লার বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫
জাগোফেনী টুয়েন্টিফোরডটকম | আপডেট : September, 10, 2016, 12:26 pm