মানবতাবিরোধী অপরাধ : সাখাওয়াতের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড

ডেস্ক রিপোর্ট» মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাখাওয়াত হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার অপর ৭ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১০ আগস্ট) বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এই রায় ঘোষণা করা হয়। মোট ৭৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের অপরারেটিভ অংশ বেলা পৌনে ১১টার দিকে পড়া শুরু করেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। পড়ে দুপুর সোয়া ১২টার পর আসামিদের দণ্ড ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনেয়ারুল হক। রায় ঘোষণার সময় আদাতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন গ্রেফতারকৃত দুই আসামি সাবেক সাংসদ সাখাওয়াত হোসেন ও বিল্লাল হোসেন। বাকি আসামিরা পলতাক রয়েছেন। পলাতক আসামিরা হলেন- মো. ইব্রাহিম হোসেন (৬০), শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান (৬১), মো. আব্দুল আজিজ সরদার (৬৫), এ আজিজ সরদার (৬৬), কাজী ওহিদুল ইসলাম (৬১) এবং আব্দুল খালেক মোড়ল (৬৮)। তাই গ্রেফতারকৃত বিল্লাল হোসেন ও পলাতক ছয়জনসহ ৭ আসামিকেই আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।আসামিদের বিরুদ্ধে মোট ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ ছিল। ট্রাইব্যুনালে সবকটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে সাখাওয়াতকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর ২ নম্বর অভিযোগে বাকি ৭ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার ১ নম্বর অভিযোগে সাখাওয়াত, ইব্রাহিম, আব্দুল আজিজ ও এ আজিজকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২ নম্বর অভিযোগে সাখাওয়াতকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে বিল্লাল, আব্দুল আজিজ, এ আজিজ, ইব্রাহিম, মুজিবর, ওহিদুল ও আব্দুল খালেককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় অভিযোগে সাখাওয়াত, মুজিবর ও আব্দুল খালেক মোড়লকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই অভিযোগ থেকে ইব্রাহিমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ অভিযোগে সাখাওয়াত, ইব্রাহিম, এ আজিজ, আব্দুল আজিজ ও আব্দুল খালেককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পঞ্চম অভিযোগে সাখাওয়াত, ইব্রাহিম, এ আজিজ, আবদুল আজিজ ও আব্দুল খালেককে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন। পরে মঙ্গলবার মামলাটি কার্যতালিকায় আসলে তাদের বিরুদ্ধে রায়ের এই নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। আদালতে সাখাওয়াতের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। পলাতক আসামিদের মধ্যে ইব্রাহিম, এ আজিজ ও মুজিবরের পক্ষে আবদুস শুকুর খান এবং আবদুল আজিজ, বিল্লাল, ওহিদুল ও আবদুল খালেকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আবদুস সাত্তার পালোয়ান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন। চলতি বছর ৯ ফ্রেব্রুয়ারি এই মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশনের ১৭ জন সাক্ষী তদের জবানবন্দি পেশ করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিল না । সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যশোরে একাধিক মামলা করা হয়। পরে ওইসব মামলা ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১ এপ্রিল সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করার জন্য নথিভুক্ত হয়। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান। সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনকে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। ২০১৫ সালের ১৪ জুন তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫ অভিযোগ আনে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মামলায় প্রাথমিকভাবে ১২ জন আসামি থাকলেও বাকি তিনজনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত। আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল এবং ২৩ ডিসেম্বর এমপি সাখাওয়াতসহ এই ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। গত ১৪ জুলাই উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল। ৯ জনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও পরে একজন মারা যাওয়ায় ৮ জনের বিরুদ্ধে আজ রায় ঘোষণা করা হয়। একনজরে সাখাওয়াত : সাখাওয়াত জামায়াতের হয়ে ১৯৯১ সালে যশোর-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন তিনি। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করে হেরে যান। ২০০১ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান সাখাওয়াত। তখন বিএনপি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এরপর তিনি এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। গত সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ আসন থেকে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

প্রকাশক সম্পাদক : জাহাঙ্গীর কবির লিটন
এলাহী মার্কেট , ২য় তলা, বড় মসজিদ গলি, ট্রাংক রোড,ফেনী।
jagofeni24@gmail.com
© 2016 allrights reserved to JagoFeni24.Com | Desing & Development BY PopularITLtd.Com, Server Manneged BY PopularServer.Com