ডেস্ক রিপোর্টঃঃ সালিশের ধার্যকৃত টাকা দিতে না পারায় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক হতদরিদ্র নারীর তিনটি গরু নিয়ে গেছে সালিশদার ইউপি সদস্যসহ লোকজন।
উপজেলার ১২নং চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নির্দেশে এই ঘটনা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওই মহিলা।
উপায়ন্তর না দেখে অবশেষে সুফিয়া বেগম নামে ওই নারী মঙ্গলবার চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের অনুলিপি ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জমা দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
এদিকে তিনটি গরু নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য।
অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার সময় ওই ইউনিয়নের চরচন্না গ্রামের মিজি বাড়ির সুফিয়া বেগমের গোয়ালে থাকা একটি ষাঁড়, একটি গর্ভবতী গাভী ও একটি বাছুর জোর পূর্বক নিয়ে যায় ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মিজানুর রহমানের (৫০) নেতৃত্বে কয়েকজন।
গরু নেয়ার সময় বাধা দিলে সুফিয়া বেগমকে মারধর করে জানানো হয়, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যান হাসান আবদুল হাইয়ের নির্দেশে গরুগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
পরের দিন সকালে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গরু ফেরত চাইতে গেলে তার ওই তিনটি গরু চেয়ারম্যানের ঘরের পাশে বাঁধা রয়েছে দেখতে পায় সুফিয়া বেগম।
এ সময় সুফিয়া বেগম চেয়ারম্যানের কাছে গরু ফেরত চাইলে, জোরপূর্বক তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে দেয় এবং বিবাদীদের টাকা দিয়ে তারপর গরু নিয়ে যেতে বলেন।
টাকা না দিলে গরুগুলো ফিরত দেয়া হবে না বলেও জানান চেয়ারম্যান হাসান আবদুল হাই।
মঙ্গলবার চরচন্না গ্রামের মিজি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অভিযোগকারী সুফিয়া বেগমের বসবাসের জন্য ছোট্ট একটি দো-চালা ঘর রয়েছে। ঘরের সামনে একটি ভাঙ্গা গোয়াল ঘর। যেই ঘরের মধ্যেই রাখা হত ওই গরু তিনটি।
সুফিয়া বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যে স্থানে থাকি এটি আমার স্বামীর আরেক স্ত্রীর (মৃত) সতীনের জায়গা। আমি দুইবারে ব্র্যাক সমিতি থেকে টাকা নিয়ে গরু কিনেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট করে গরু তিনটি বড় করছিলাম। কিন্তু আমার একমাত্র সম্বল গরুগুলো নিয়ে গেছে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের লোকেরা। শুনেছি তারা নাকি ষাঁড় গরুটিকে একটি বিশেষ দিনে জবাই করে দিয়েছে। অন্য দুটি গরু চেয়ারম্যানের বাড়িতে আছে।’
সুফিয়া বেগম বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়। ওই ঘটনায় সালিশে বসা নিয়ে চেয়ারম্যান আমাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এক লাখ টাকা জমা দিতে বলেন। টাকা না দেয়ায় তারা আমার গরুগুলো নিয়ে যায়।’
এ নিয়ে জানতে ইউনিয়ন পরিষদের নিকটস্থ চৌমুহনী বাজারে গেলে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘৪/৫ দিন গরু তিনটি এই ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে বাঁধা ছিল। এখন গরুগুলো আর নেই। শুনেছি গরুগুলো চেয়ারম্যানে বাড়িতে আছে।’
ইউপি মেম্বার মো. মিজানুর রহমানের কাছে মোবাইলফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গরু নেয়ার মত কোনো ঘটনাই ঘটেনি। প্রয়োজনে আপনারা সরেজমিন তদন্ত করে যান।’
গরু নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান হাসান আবদুল হাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবদিন বলেন, ‘যেহেতু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ সর্ম্পকে চাঁদপুর পুলিস সুপারের কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
।। যুগান্তর।।