ডেস্ক রিপোর্ট>>ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর সংসদ সদস্য (এমপি) পদের বৈধতা নিয়ে করা রিটের রায় এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। রায় দেওয়ার সময় নিজাম হাজারী আদালতে তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে জানান, কারাগারে সাজা খাটার সময় তিনি ১৩ ব্যাগ রক্ত দান করেছিলেন। এর বিনিময়ে তাঁর ৪৮৬ দিন সাজা মওকুফ করা হয়।
আজ বুধবার বিচারপতি মো. এমদাদুল হক এবং বিচারপতি ইকবাল কবির লিটন রায় স্থগিত করে ৩ নভেম্বর পুনরায় শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। এর আগে শুনানির শেষে গতকাল মঙ্গলবার থেকেই এই মামলার রায় দেওয়া শুরু হয়েছিল। রায়ের মাঝপথেই নিজাম হাজারী ১৩ ব্যাগ রক্তদানের বিনিময়ে ৪৮৬ তিন সাজা মওকুফ চেয়ে আবেদন করার পর আদালত রায় স্থগিত করেন।
হাজারীর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারাগারে সাজা খাটাকালীন সময়ে তিনি ১৩ ব্যাগ রক্ত দান করেছিলেন। বিনিময়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর ৪৮৬ দিন সাজা মওকুফ করেছিল।’
এর আগে গত ২৩ আগস্ট রায় ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু মামলার নথি পর্যালোচনার জন্য সময় প্রয়োজন মনে করে রায়ের দিন গতকাল ৩০ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করা হয়। গত ২১ আগস্টই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার অফিসের পক্ষ থেকে আদালতে নথিটি জমা দেওয়া হয়।
ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন।
অপরদিকে, রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি সংবাদপত্রে প্রতিবেদন ছাপা হয়৷ এতে বলা হয়, ২০০০ সালের ১৬ আগস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় নিজাম হাজারীর ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়। তিনি দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
পরে ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত হোসেন ভূঁইয়া।
আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁর মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।
সেই হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ছিলেন না। অথচ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন।
রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন হাইকোর্ট রুল দেন। এরপর হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এই রুল শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন। শেষ পর্যন্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য পাঠান প্রধান বিচারপতি। এই বেঞ্চে চলতি বছর ১৯ জানুয়ারি রুল শুনানি শুরু হয়।
নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদ নিয়ে দেওয়া রুল শুনানিতে গত ২৬ মে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ এক আদেশে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষকে নিজাম হাজারীর সাজা ভোগ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে হবে। পরে কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১০ বছরের সাজার মধ্যে তিনি সাজা খেটেছেন পাঁচ বছর আট মাস ১৯ দিন।
কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন এক বছর ৮ মাস ২৫ (৬২৫) দিন। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন সাত বছর পাঁচ মাস ১৪ দিন। এখনো সাজা খাটা বাকি আছে দুই বছর ছয় মাস ১৬ দিন।